Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

মুক্তমত ও ফিচার

আত্মহত্যা ও সমাজের দায়সারা ভাব

আহমেদ হানিফঃ
২৭ দিন আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪
# ফাইল ফটো

খবরের কাগজ খুললে হরহামেশা চোখে পড়ে আত্মহত্যার কথা।চারপাশে যে পরিমাণ আত্মহত্যার কথা শুনা যায় তাতে মনে হতে পারে এই আরকি নিয়মিত তো তা হচ্ছে।আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সাধারণ ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা গেলেও আত্মহত্যার মাধ্যমে শুধু মাত্র একটা জীবনের অবসান নয় পুরো একটা পরিবারে নেমে আসে নানা সমস্যা।
নানান কারণে আমাদের সমাজে আত্মহত্যার মতো নিন্দনীয় কাজ ঘটতে দেখা যায়।
আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার

প্রাধান্য বেশি দেখতে পাওয়া যায়-

যেমন,
মানসিক ভাবে সমস্যায় নিমর্জিত হয়ে,হতাশা,ক্ষোভ,সম্মানহানির ভয়ে,দারিদ্র্যতা,বিয়ে,প্রেম-বিরহ,পরকীয়া সহ নানা ধরণের সমস্যার জন্য মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
যারা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয় তারা হয়তো ভাবে আত্মার বিসর্জনের মাধ্যমে তারা নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলে সব শেষ,আসলে তারা ভুলের মধ্যে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। তাদের আত্মহত্যার মাধ্যমে অন্যদের জীবনে নিয়ে আসে নানান দুর্দশা।

ছোটখাটো কারণ কিংবা না পাওয়ার বেদনায় মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে।আমাদের সমাজে আত্মহত্যার মতো নিন্দনীয় কাজের জন্য তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই সমাজের মানুষের।আমরা আত্মহত্যার কাজটিকে নিছক একটা ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করি না। আপনি নিরপেক্ষতার নিরিখে বিচার বিশ্লেষণে বসলে বুঝতে পারবেন।প্রত্যেকটা আত্মহত্যার পিছনে লুকিয়ে থাকা সত্যে আপনি আমি সবাই জড়িত। আমরা তো আর মৃত আত্মার বিচার বা জবানবন্দি নিতে পারি না,না হলে হয়তো কতক জীবিত মানুষরা নিজেদের দায় এড়াতে পারতো না।

সমাজের নীতিতে আমরা জানি দুই ভাবে ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করা হয়
১.অপরাধ
২.বিচ্যুতি

যে সকল কাজের জন্য মানুষকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করা হয় তাকে অপরাধ বললেও সামাজিক ভাবে ঘৃণা, অবজ্ঞার মাধ্যমে বিচ্যুতির সংজ্ঞায়ন করে বসি।তবে আপনি আমি কিভাবে আত্মহত্যাকে বিচ্যুতির কাতারে ফেলে দায়সারা ভাব দেখিয়ে আরামে বসে থাকতে পারছি।

না,এইখানে অপরাধের বিষয়টি খুব করে চোখে পড়ছে।এমনি এমনি একটা মানুষ আত্মহত্যার মতো নিন্দনীয় কাজ করতে পারে না।
তাই আত্মহত্যার বিষয়টি বিচ্যুতির কাতারে না ফেলে সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে বিচার বিশ্লেষণ করলে বলতে পারবেন একজন মানুষ সহসা আত্মহত্যা করতে পারে না।

আত্মহত্যা ও সমাজের দায়সারা ভাব:-

আত্মহত্যা করা লোকটা যেমন সমাজের মানুষের কাছে ঘৃণিত হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি অনেক সময় তার পরিবারটিও সমাজের নিকট খারাপ ভাবে বিবেচিত হয়।
আপনি,আমি কি কোনোদিন ভেবেছি মানুষ কেন আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানুষের এই পরিণতির পেছনে আমাদের হাত থাকলেও আমরা দায়সারা ভাব দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছি নিয়মিত।

কি কারণে মানুষ নিন্দনীয় কাজে ধাবিত হচ্ছে তা অনুসন্ধান না করে বিচারের কাতারে নিয়ে এসে আত্মার খারাপত্বের বিশ্লেষণ মোটেও সমীচীন নয়।
যেসকল বিষয়ে আমাদের দায়সারা হলে চলবে না:-

পারিবারিক কলহের কারণ-

বর্তমানে এমন একটা সময় অতিবাহিত করছি আমরা যেখানে পারিবারিক কলহ যেন নিত্যকার কাজ,স্বামী-স্ত্রী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি,অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই রয়েছে।যার কারণ অনুসন্ধানে আমরা দেখতে পাই,যৌতুক, সন্তানহীনতা, অবজ্ঞা, উপঢৌকন ইত্যাদির কারণে পরিবারগুলোতে কলহ লেগে থাকে।যার ধরুন অনেকে আত্মহত্যার পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাই আমাদের এই পারিবারিক কলহের অবসানে কাজ করতে হবে আমাদের উচিত হবে সামাজিক রীতিনীতি কিংবা সংস্কৃতি পরিবর্তন করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান পাকাপোক্ত করা।

নিঃসঙ্গতা দূরীকরণ:-

একাকীত্ব মানুষকে হতাশাগ্রস্ত করে তোলে তখন মানুষ নিজেকে বিলিন করে দেওয়ার মতো খারাপ কাজে অগ্রসর হতেও দ্বিধাবোধ করে না।তাই নিঃসঙ্গতা দূরীকরণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুন্দর জীবনের পথে অগ্রসর হতে হবে।

সন্তানের গতিবিধি নজরদারি করা:-

আমাদের সন্তানরা কাদের সাথে মিশতেছে তা আমাদের নজরদারিতে রাখা উচিত,কার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে তা অনুসন্ধান করতে হবে।বর্তমানে আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার মতো দিকে ধাবিত হচ্ছে চলাফেরাজনিত ত্রুটির জন্য,প্রেমজনিত সমস্যার কারণে অনেকেই আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে দায়সারা ভাব দেখালে চলবে না।

সর্বোপরি বলতে পারি, সুন্দর জীবন লাভ ও বেঁচে থাকা সবার অধিকার। আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত কাজের মাধ্যমে সুন্দর জীবনকে বিসর্জন দেওয়া কখনো গর্বের কাজ নয়।
তাই আত্মহত্যা রোধে আমাদের সকলকে আন্তরিক হতে হবে,দায়সারা ভাব বর্জন করে আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সেদিকে নজর দানের মাধ্যমে আত্মহত্যার মতো নিন্দনীয় কাজ লাঘব করা সম্ভব হবে।

২৭ দিন আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন