কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে রুট পারমিট বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যাপক কবির আহমেদ,সাধারণ
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, গত কিছুদিন ধরে কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে বাসের রুট পারমিট বিষয়ে একটি মহল কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে- সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও অদৃশ্য কারণে কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের কুমিল্লা অংশে যাত্রী পারাপার করতে পারছে না আইদি পরিবহনের বাস। যদিও আইদি পরিবহন নামীয় একটি বাস সার্ভিস কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে চলাচলের জন্য ২০২৩ সালের শেষ দিকে চাঁদপুর আরটিসিতে ২০টি গাড়ির রুট পারমিটের জন্য আবেদন করে। চাঁদপুর আরটিসি কর্তৃপক্ষ কুমিল্লার আরটিসির অনাপত্তি চায়। উল্লেখ্য যে, কুমিল্লায় ৩টি বাস টার্মিনাল রয়েছে। একটি আশ্রাফপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এবং চশবাজার বাস টার্মিনাল। এই টার্মিনালগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি গাড়ি রয়েছে। যার ফলে গাড়িগুলো মূল সড়কের উপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। ফলে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে। এর ফলে প্রতিনিয়ত যানজটে অতিষ্ঠ মানুষজনের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। এমনটি বাস-স্টাফদের সাথে এলাকাবাসী, দোকানী ও পথচারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। এগুলো প্রতিনিয়ত প্রশাসনের নজরে আসছে এবং বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনারও হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রেক্ষিতে বিগত ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা আরটিসি কর্তৃপক্ষ এই তিনটি টার্মিনালের মধ্যে আশ্রাফপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও অন্য দুটি টার্মিনাল স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে যে কোনো রুটে নতুন কোনো সার্ভিসের অনুমোদন না দেওয়ার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এতে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ, শ্রমিক ইউনিয়ন বা কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিলো না । যদিও আইদি পরিবহন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করে। তাদের সার্ভিসটি অনুমোদনের জন্য বিগত ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট চাঁদপুর জেলা আরটিসির মিটিংয়ে জোর সুপারিশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু নাঈম দুলাল পাটোয়ারি। যা ৩০ আগস্ট চাঁদপুর আরটিসির কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা আছে। এছাড়াও চাঁদপুর থেকে জগতপুর পর্যন্ত চলাচলের জন্য সার্ভিসটি উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর রফিকুল ইসলাম। যদিও গাড়িগুলো কাগজপত্র ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে চলাচল করছে। বর্তমানে আইদি কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে ওনারা স্বৈরশাসক এবং আইদি কর্তৃপক্ষ পুরদস্তুর বিএনপি হওয়ার চেষ্টা করছেন। যাকে হাইব্রিড বিএনপি বলা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, আইদি পরিবহন নামে বাস সার্ভিসটি চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রুট পারমিটের জন্য ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট সভার মাধ্যমে কুমিল্লা আরটিসির কাছে অনাপত্তি চেয়েছে। অথচ এর দেড় বছর পূর্বেই স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে কুমিল্লায় নতুন রুট পারমিট বন্ধ হয়ে যায়। এটি কোনো সার্ভিসকে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি। আইদি ছাড়াও আরো প্রায় ১৫/২০টি নতুন সার্ভিস কুমিল্লা থেকে বিভিন্ন রুটে পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিয়ে রেখেছে। এসব সার্ভিসে গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪/৫ শত। এখন যদি কোনো পরিবহন সার্ভিসকে অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে অন্য সার্ভিসগুলোকেও অনুমোদন দিতে হবে। যে খানে টার্মিনালগুলো বর্তমান অনুমোদিত গাড়িগুলো রাখারই জায়গা নাই, সেখানে নতুন আরো ৪/৫ শত গাড়ি কিভাবে রাখা সম্ভব হবে? বিভিন্ন গণমাধ্যমে আরো একটি খবর এসছে যে, বোগদাদ নামীয় কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটের সার্ভিস যাহা প্রায় ৪০ বছর যাবত চলাচল করছে- এই সার্ভিসের নাকি কুমিল্লার অনুমোদন থাকলেও চাঁদপুরের অনুমোদন নাই। কথাটি সম্পূর্ণ অসত্য। কারণ বোগদাদ সার্ভিস ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে চালু হয়েছে। চাঁদপুর জেলা গঠিত হয়েছে ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। চাঁদপুর বিআরটিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। এই সময়ের মধ্যে কুমিল্লা বিআরটিএর মাধ্যমে মোটরযানের সবকিছু পরিচালিত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, বোগদাদ সার্ভিস নিয়ে অপপ্রচারটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইদি পরিবহনকে কেন্দ্র করে আইদি কর্তৃপক্ষ ও তাদের কিছু দোসর জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। জেলা বিভক্তি নিয়ে তারা চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টির পায়তারা করছে এবং ঘৃণার অপরাজনীতি শুরু করেছে। অথচ আইদির পরিচালক পারভেজ আলম বহু বছর আগে থেকেই কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত। কুমিল্লার তার তিন ভাইয়ের তিনটি ফ্ল্যাট আছে। তিনি বিয়ে করেছেন কুমিল্লায়। তার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলোও চাঁদপুর না করে কুমিল্লায় করেছেন। এতেই তার কথিত ‘চাঁদপুর প্রীতি’র আসল রূপ বের হয়ে আসছে। তিনি মূলত তার সার্থের জন্যই এসব কর্মকাণ্ড করছেন এবং সাধারণ মানুষকে ধোকা দেওয়া ও বিভ্রান্ত করছেন। শুধু তা-ই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার স্টাফরা আন্দোলনরত ছাত্রদেরকে নাজেহাল ও মারধর করেছে; যা চাঁদপুরের শ্রমিকরাও জানেন। এছাড়াও তারা একটি বৃদ্ধাশ্রমের নামে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ বৃদ্ধাশ্রমের নামে একটি দালান আজ থেকে ৬/৭ বছর আগে গাঁথুনি দিয়ে রাখা হয়েছে। যেটিতে কোনো দরজা/জানালা পর্যন্ত লাগানো হয়নি। বৃদ্ধাশ্রমের নামে এই অবকাঠামোর বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষদের নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাদের বক্তব্য এই সার্ভিসের গাড়িগুলোর আয়ের টাকা বৃদ্ধাশ্রমের জন্য খরচের কথা বললেও বাস্তবে প্রত্যেকটি গাড়ির জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা করে ঋণ রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেই হিসেবে ১৬টি গাড়িতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। অথচ এই ঋণ এখন বৃদ্ধাশ্রমের উপর গিয়ে বর্তাবে। সুদে-আসলে এই ঋণ পরিশোধ করে বৃদ্ধামের উন্নয়ন করিবে। যা মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটিও এক ধরনের প্রতারণা। সর্বোপরি আমরা এই কাদা ছোঁড়াছুড়ির অবসান চাই এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ মাধ্যমে জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদের যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা খণ্ডিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং কুমিল্লার এডিএম মহোদয়ের নাম উল্লেখপূর্বক যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, সেই বক্তব্য তিনি এইভাবে দেননি বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা এই ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে সড়ক ও পরিবহনের সার্বিক শৃঙ্খলার সার্থে টার্মিনালগুলি সম্প্রসারণ ও স্থানান্তরের পূর্বে বর্তমানে নতুন কোনো সার্ভিস অনুমোদন না দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
১০ দিন আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪