জালি বেত দিয়ে মারধর করে শিশু গৃহপরিচারিকার শরীরে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেবার অভিযোগ পাওয়া গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিনের বিরুদ্ধে। গৃহপরিচারিকা শিশুটি দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করে। স্থানীয়রা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ দগ্ধ ওই গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করে। তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়।
এদিকে শিশু মেয়েটির মামা ইব্রাহিম খলিলকে সারারাত কোতয়ালি থানায় বসিয়ে রাখা হয়। আজ বুধবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। সমঝোতা করে থানায় মামলা না করার জন্য শিশুটির মামাকে চাপ দেয়া হচ্ছে অধ্যক্ষের পরিবার থেকে।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ৭টায় কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেস বাড়িতে এ নির্মম ঘটনা ঘটে।
১০ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকা সুমাইয়া আক্তারের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতি ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামে।
সুমাইয়া অভিযোগ করে, আবু তাহেরের কুমিল্লার বাসা এবং তারা মেয়ে ফাহমিদা তিমুরের ঢাকার বাসায় মোট চার বছর ধরে কাজ করছে সে। কাজে দেরি হলে তাহেরের স্ত্রী ও মেয়ে জালি বেত দিয়ে মারধর করতো। শরীরে ঢালতো গরম পানি। মঙ্গলবারও একই ভাবে গরম পানি ঢেলে তার পা ঝলসে দেয়। আজ আবার মারের পর গরম পানি ঢালতে চাইলে দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে সুমাইয়া। দৌড়ে পাশের মেয়েদের হোস্টেলে আশ্রয় নেয়।
হোস্টেলের এক মেয়ে বলেন, ‘আমরা উপরে চিৎকার চেচামেচি শুনি। পরে দেখি ছোট একটি মেয়ে আমাদের রুমে এসে আশ্রয় চাইছে। তার পা ঝলসে গিয়েছিল। পরে আমরা পুলিশে জানাই। আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন মেয়েটিকে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। স্থানীয়দের বাধায় পারেননি।’
গৃহপরিচারিকার মামা ইব্রাহিম খলিল জানান, মেয়েটির মা-বাবা অনেক আগেই আলাদা হয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সুমাইয়া আমাদের কাছেই ছিল। অধ্যক্ষ সাহেবের মেয়ের জামাতা প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের মাধ্যমে মেয়েটিকে এখানে কাজ করার জন্য দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, আমাকে মামলা না করার জন্য বলা হচ্ছে। অধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে সমঝোতা করার জন্য বলা হচ্ছে। সারারাত থেকে এখন পর্যন্ত ( বুধবার সকাল সোয়া ১০ টা ) ডিউটি অফিসারের কক্ষেই আমি বসে আছি।
রাত ৩ টা পর্যন্ত অধ্যক্ষ ও শিশুটির মামা থানায় অবস্থান করছিলেন। ওই সময় পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। আমার স্ত্রী জানিয়েছে, সুমাইয়াকে সে মারধর করেননি। সে পাপোষে পা পিছলে পড়ে পায়ে একটু গরম পানি পড়েছে।
গভীররাতে থানার বাইরে সাবেক অধ্যক্ষকে বিভিন্ন মাধ্যমে মিডিয়াকেও তাদের পক্ষে রাখার জন্য চেষ্টা করতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হয়তো শেষ পর্যন্ত স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও ভিন্ন কারণে সবাইকে ম্যানেজ করে অধ্যক্ষের স্ত্রী রেহাই পেয়ে যেতে পারেন। কারণ শিশুটির মামা সারারাত থানায় বসে থাকলেও রহস্যজনক কারণে মামলা করেনি। তাকে ডিউটি অফিসারের কক্ষেই সারারাত বসিয়ে রাখা হয়। অধ্যক্ষের মেয়ের জামাতাও দেবিদ্বারের ধামতি ইউনিয়নে গেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে। শোনা যাচ্ছে ওই ইউনিয়নের ২ জন মেম্বারও আসতেছে থানায়।
এ বিষয়ে জানতে ধামতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মিঠুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ সনজুর মোর্শেদ
বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে এসেছি। মেয়েটির পা ঝলসে গেছে। শিশুটির
পরিবার মামলা করলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে শিশুটির মামা এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা করেনি।
১০ দিন আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪