Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

কুমিল্লা বিভাগ

“রত্নগর্ভা মা" জাতীয় সম্মাননা পদক পেলেন আলহাজ্ব শাহানারা বেগম

স্টাফ রিপোর্টার:
৬ ঘন্টা আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪
# ফাইল ফটো

“রত্নগর্ভা মা" ২০২২ জাতীয় সম্মাননা পদক পেলেন ড. ইঞ্জি: মোহাম্মদ তৌহিদুল হক মোল্লা'র মাতা আলহাজ মিসেস শাহানারা বেগম৷ তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা৷ তার স্বামীর নাম মরহুম হাজী মোহাম্মদ শামসুল হক মোল্লা৷

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) 'র উদ্যোগে ১ জানুয়ারির দুপুর দেড়টায় ঢাকার রমনার আইইবি মিলনায়তনে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। 

আইইবি 'র প্রেসিডেন্ট

প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি৷ বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর৷ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ৷

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা  আলহাজ শাহানারা বেগম একজন অনুভূতিপ্রবণ, সংগ্রামী, সহনশীল, অতি-পরিশ্রমী, আত্ম-ত্যাগী, সর্বোপরি, অনুসরণযোগ্য নারী ব্যক্তিত্ব৷ তিনি প্রকৃতই মেধাবী, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধি সম্পন্না, অদম্য-সাহসী, অসামান্য-প্রতিভাময়ী ও অনুপ্রেরণীয় নারীসত্তা৷ তিনি ৪ সন্তানের জননী৷ নিজের সব সন্তানকেই উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করার কঠোর লড়াইয়ে সফল হয়েছেন তিনি৷ উনার ছোট ছেলে কম্পিউটার সাইন্টিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ার আর ছোট মেয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা৷

জন্ম ও পড়াশুনা কুমিল্লা শহরে হলেও মাত্র ১৭ বছর বয়সে দেবিদ্বার গ্রামে বিয়ে হয়৷ সব ধরণের প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে স্বামীর যৌথ সংসারে (শাশুড়ি, দুই ভাই এবং পরবর্তীতে মেজো ভাই-এর চার সন্তানের পরিবারবর্গ) ২২ বছর, ৪০ বছর সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা, ৪ ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করাসহ ৫২ বছর ধরে ঘর-সংসার ও গেরোস্থালীয় যাবতীয় কাজ দেখাশুনা করে আসছেন৷ দুর্দিনে  স্বামী অসুস্থ হয়ে ৬ মাসের মেডিকেল লীভে বিনা বেতনে শয্যাশায়ী হলে স্বামীর সেবা, সন্তানদের দেখাশুনা, স্কুল ও গেরস্থালির কাজ করার পর কাপড়-সেলাই করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করে সেই টাকা দিয়ে দুই ছেলেকে এক কালারের কমপ্লিট স্যুট বানিয়ে দেন, অথচ নিজে কম-দামি কাপড় পড়েন৷

পড়াশুনার প্রতি উনার ঝোক ছিলো অত্যন্ত বেশী৷ স্বামী-সংসারে  দ্বিতীয় ছেলের জন্মের পর, নভেম্বর ১৯৭২ সালে  উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন৷ এপ্রিল ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায়, ফয়জুন্নেসা গভঃ গার্লস হাই স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন৷

জুন ১৯৬৭ সালে, তিনি গভঃ প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা হতে এক বছরের প্রাইমারি ট্রেনিং  কোর্সের পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৬৬ -  ১৯৬৭ সেশনে অনুষ্ঠিতব্য 'মিউজিক্যাল চেয়ার' ইভেন্টে তৃতীয় হন৷

তিনি ১.৯.১৯৬৮ইং তারিখে দেবিদ্বার মডেল প্রাইমারি স্কুল এ সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ - ১৯৭০ শিক্ষাবর্ষের কুমিল্লা জেলার সেরা শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত হন ৷

তিনি ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত জনসংখ্যা শিক্ষা ওয়ার্কশপ সাফল্যের সাথে শেষ করার সনদপত্র পান৷

এই রত্মগর্ভা মায়ের সন্তানরা জানান, মায়ের নিজের জীবনে উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটেনি৷ তাই ছেলে-মেয়েদের জীবনে যেন তা পূর্ণ হয় সেদিকে সর্বদাই সজাগ, তৎপর ছিলেন৷ সন্তানদের সুশিক্ষা দিয়ে দেশে-বিদেশে আলোকিত ও বিকশিত করে তুলেছেন তিনি৷ বড় ছেলে রাশিয়ান স্কলারশিপে কৃষিবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করেন৷ তার পথ ধরে  ছোট ছেলেও ভিনদেশে চলে যান উচ্চ শিক্ষার জন্যে৷ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ কমিউনিকেশন মিনস (এম.আই.আই.টি) থেকে সি.এস.ই. তে বি.এসসি (অনার্স), এম.এসসি, এম.ফিল, পি.এইচডি ডিগ্রী নিয়ে ১১ বছর পরে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ফুল-টাইম, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স এ কাজ করেন৷ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষের কিছু দিন আগে কানাডিয়ান সরকার প্রদত্ত স্কিলড ক্যাটাগরিতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার অফার পান৷ উন্নত জীবনের আশায় চলে যান কানাডাতে৷ নতুন দেশের নতুন সমাজে স্থান করার সংগ্রামে বেশ সময় চলে যায়৷ এদিকে আব্বা ইহলোক ত্যাগ করেন৷ মা হয়ে পড়লেন আরও নিঃসঙ্গ, আরও একা৷ বড় মেয়ে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি. এ. (অনার্স), এম. এ. পাশ করেন৷ ছোট মেয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বি. এসসি. (অনার্স), এম.এসসি. পাশ করেন৷ মা যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, উনার ছোট মেয়ে, সেই ফয়জুন্নেসা গভঃ গার্লস হাই স্কুল থেকে শিক্ষকতার যাত্রা শুরু করেন৷

গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে আমাদের বাবা-মার এই অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরন্তর চেষ্টা ও আত্মত্যাগ, সমাজে বিরল ও নজিরবিহীন৷ ভালো ও আলোকিত মনের মানুষ করে আমাদেরকে সাফল্যের শীর্ষচুড়ায় পৌছাতে বাবা-মার নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় মাযের এই অবদান অবিশ্বরণীয় হয়ে থাকবে৷

৬ ঘন্টা আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন